গল্প – অভিনয়
Part – 03
writer – J$_ArFin_SuMon
আজ অনেক দিন পর ইশার ছোঁয়ায় জুলিকে অনুভব করতে পারলো যার ফলে রিয়ান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে…
আব্বুঃ- কিরে তোর কি হলো কিছু বলছিস না কেনো?
রিয়ান কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে….
রিয়ানের নিরবতাকে সবাই হ্যাঁ ধরে নিয়েছে…..
ইশা রিয়ানের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না কারণ ইশা রিয়ানের রাগি চেহারা দেখেছে আর অনেক ভয় পেয়েছে..:
ইশা চুপ করে বসে আছে….
ইশার আব্বুঃ- হ্যাঁ তাহলে পাকা কথা সেরে ফেলাই ভালো..:
আব্বুঃ- হুম দেড়ি করতে চাই না,,কারণ ছেলের মন পরিবর্তন হয়ে গেলে নতুন করে সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে..তাই আমি চাচ্ছি আজ কালের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিতে…
ইশার আব্বুঃ- কিন্তু আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে
একটু অনুষ্টান না করলে কেমন দেখাবে…
আব্বুঃ- হ্যাঁ সেটা আমিও বুঝি কিন্তু কিছু করার নেই
আমি অতি তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছি…
ইশাঃ- আব্বু তুমি এতো কথা বলছো কেনো??
আমিও চাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে রিয়ানকে সুস্থ জীবন দিতে।। আমি জানি ও একাকীত্বে ভুগছে।
ওর দরকার এমন একজনকে যে ওকে সময় দিবে ওর সব কিছু বুঝবে..আর আমি চাই ওর সাথে সাথে থাকতে যদি পারো আজকেই বিয়ে দিয়ে দাও…
আব্বুঃ- নাহ মা সেটা হয় না একেবারে যে অনুষ্ঠান করবো না সেটা না…এই একদিনে যতটুকু পারি ততটুকু করবো…
ইশাঃ- আব্বু কোনো কিছুরই দরকার নেই,,আজকেই বিয়ে দিয়ে দিন..আমি কথা দিচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি রিয়ানকে আমি সুস্থ করে তুলবো..তখন না হয় বড় করে সব আয়োজন করে বিয়ে দিবেন এখন এইসব থাক,,,
আব্বুঃ- এতে আমার কোনো আপত্তি নেই..আমি চাই আমার ছেলেটা যেনো সুস্থ জীবনে যাপন করতে পারে এখন যদি তোমার আব্বু আম্মু এটা চাই তাহলে আজকেই বিয়ের সব কাজ সেরে ফেলবো…
ইশার আব্বুঃ- আমারো কোনো আপত্তি নেই..আমার মেয়ে যেখানে রাজি সেখানে আপত্তি করে লাভ নেই…
তাহলে সব ব্যাবস্থা করা যাক
উকিল এসেছে
ইশা সাইন করে দিলো…
কিন্তু
রিয়ান কলম হাতে করে বসে আছে…
আব্বুঃ- কি হলো রিয়ান সাইন করো…
আম্মুঃ- দেখ রিয়ান পুরোনো কথা এখন মনে না করাই ভালো…
রিয়ান তবুও চুপ করে বসে আছে…
ইশা এতোক্ষন চুপ করে সব দেখছিলো
কিন্তু এইভাবে আর কতক্ষণ চুপ করে থাকা যায়…
তাই ইশা উঠে গিয়ে রিয়ানের হাত চেপে ধরলো…
রিয়ান আবার ঘোরের মধ্যে চলে গেছে…
ইশাঃ- কি হলো এমনভাবে চুপ করে বসে আছ কেনো
সাইন করে দাও…
ইশা কয়েকবার বলতেই রিয়ান সাইন করে দিলো..
রিয়ান ইশার কথায় সাইন করে দিলো এটা দেখে আব্বু আম্মু একটু অবাক হলো…
রাতে ইশা গিয়ে ঘরে বসে আছে…
রিয়ান কোথায় আছে সেটা কেউ জানেনা…
হয়তো বাসার কোনো এক কোনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে।
অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো রিয়ান ঘরে আসছে না…
রাত অনুমানিক প্রায় ১টার সময় রিয়ান রুমে আসলো
ইশা বসেই আছে…
রিয়ান রুমে আসতেই ইশা রিয়ানের কাছে চলে গেলো।
ইশা লক্ষ্য করলো রিয়ানের চোখ দুটো ফুলে আছে আর লাল হয়ে আছে।
ইশার বুঝতে বাকি রইলো না রিয়ান এতোক্ষন কান্না করেছে।
ইশাঃ- এই তুমি এতোক্ষন কান্না করেছে…?
রিয়ান মাথা নেড়ে উত্তর দিলো…হ্যাঁ
ইশাঃ- কেনো কান্না কেনো করেছ?!
রিয়ান এইবারর আর কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে…
ইশাঃ- কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি তো নাকি? বলো কান্না কেনো করেছ ?
রিয়ান এইবার একটা খাতা আর কলম নিলো..তারপর কিছু একটা খাতায় লিখে সেটা ইশাকে দিলো…
ইশা সেটা পড়তে লাগলো…
– আমি জুলিকে খুব ভালোবাসি আমি জুলিকে কথা দিয়েছিলাম জুলি ছাড়া আর কাওকে কোনো দিন বিয়ে করবো না।
কিন্তু আজ আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না,,
আমি আমার জুলিকে ঠকিয়েছি…
ইশাঃ- দেখো রিয়ান যে চলে গেছে তার কাছে দেওয়া কথা কেনো এখনো মনে রেখেছো বলো তুমি…
রিয়ান আবার লেখা শুরু করলো আর লেখা শেষ হলে খাতাটা ইশার হাতে দিল…
– কে বলেছে আমার জুলি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে জুলি সব সময় আমার সাথে থাকে…
ইশাঃ- রিয়ান তুমি কতদিন আর কল্পনার রাজ্যে বসবাস করবে বলতে পারো? হ্যাঁ মানছি তুমি জুলিকে ভালোবাস…
কিন্তু জুলি কি এই পৃথিবীতে আছে সে তো নেই
তোমাকে একা করে চলে গেছে…
আচ্ছা আমাকে বলতে পারবে আল্লাহ না করুক যদি জুলির যায়গায় তোমার কিছু হয়ে যেত
জুলি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করতো?
সে কি তোমার মত একা জীবন যাপন করতো…
হ্যাঁ সে চাইতো তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে কিন্তু কতদিন?
পরিবারের চাপে পড়ে একসময় না ইচ্ছা না থাকা শর্তেও অন্য কাওকে বিয়ে করে ফেলতো।
রিয়ান আবার কিছু লিখে খাতাটা ইশার দিলো…
– তাহলে তো আমাকে মরে দেখতে হয় যে জুলি সত্যি অন্য কাওকে বিয়ে করে কিনা??
এটা পরেই ইশা রেগে রিয়ানকে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো…
ইশাঃ- নেক্সট টাইম যেনো এই কথা আর না শুনি।।
রিয়ান আবারো কিছু একটা লিখে দিলো…
– এই জানেন আমার জুলিও ঠিক এমনভাবে আমাকে মারতো..আচ্ছা আমার কেনো এমন মনে হচ্ছে যে আপনিই আমার জুলি…
ইশাঃ- কারন জুলি তোমাকে ভালোবাসতো আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
রিয়ান আবারো কিছু একটা লিখে দিলো…
– কিন্তু আমি শুধু আমার জুলিকেই ভালোবাসি
আমাদের দুজনের মধ্যে আর কেও আসতে পারবে না…
ইশাঃ- আর অই তুমি কথা বলো না কেনো?
রিয়ানঃ- কারণ আমার কথার বলার সমস্ত শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি,জানেন আমি চেষ্টা করলেও এখন আর কথা বলতে পারি না..(খাতায় লিখে)
ইশাঃ- তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?
রিয়ানঃ- কারণ তুমি করে শুধু জুলিকেই বলেছি..
আর তুমি ডাকটা শুধু জুলির জন্য…(খাতায় লিখে)
ইশাঃ- উফফ সেই কখন থেকে জুলি, জুলি, আর জুলি পেয়েছো টা কি তুমি? যে মানুষ টা কয়েক বছর আগেই মারা গেছে তাকে নিয়ে কেনো এখনো পড়ে আছ ভালো লাগে না।
ইশা এক প্রকার রাগ করেই সেখান থেকে রুমের বাইরে চলে আসলো…
ছাঁদে চলে গেলো আর ভাবতে লাগলো
কিভাবে জুলিকে রিয়ানের মন থেকে দূর করা যায়
কিন্তু সেটার জন্য কি করবে ইশা কিছুতেই তা বুঝতে পারছিলো না…এমন সময় ছাঁদে অন্য কারো উপস্থিতি টের পেলো…
কেউ একজন ফিস ফিস করে কথা বলছে
ইশা কথার শব্দ শুনে এগুতে লাগলো
গিয়ে দেখে ছাঁদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে রাত্রী…
ইশা পেছন থেকে রাত্রীর কাঁধে হাত রাখলো…
রাত্রী রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো…
ইশাঃ- আরে ভয় পাবার কিছু নেই,,এতো রাতে এখানে দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছো?!
রাত্রীঃ- ক ক কই কারো সাথে না তো.…
ইশাঃ- দেখ আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ো না..।আমি শুনেছি তুমি একটু আগে কারো সাথে ফিস ফিস করে কথা বলছিলে।। আর সেদিন এটাও বলেছ তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে..তাই আর লুকিয়ে লাভ নেই…
রাত্রীঃ- হ্যাঁ না মানে রানার সাথে কথা বলছিলাম…
ইশাঃ- এই রানাটা আবার কে ?
রাত্রীঃ- আমার বয়ফ্রেন্ড..কিন্তু ভাবি তুমি এতো রাতে এখানে কেনো?! জানতাম ভাইয়া তোমাকে মেনে নিবে না..কিন্তু ঘর থেকে বের করে দিবে এটা আমার জানা ছিলো না…
ইশাঃ- উফফ রাত্রী তুমি সব সময় একটু বেশি বুঝো..আসলে তোমার ভাইয়া জুলিকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না সব কিছুতেই জুলি। বোন আমার তুমি তো প্রেম করো আমাকে কিছু একটা আইডিয়া দাও না যাতে করে তোমার ভাইয়াকে লাইনে আনতে পারি…
রাত্রীঃ- দেখো ভাবি ভাইয়াকে লাইনে আনা এত সহজ না যতটা তুমি ভাবছো,,তবে তুমি চাইলে আমি তোমাকে পুরো সাহায্য করতে পারি…
ইশাঃ- তাহলে তো অনেক ভালোই হয়…
রাত্রীঃ- দেখো ভাইয়া যেহেতু জুলিকে ভুলতে পারছে না তাহলে তুমি এক কাজ করতে পারো…
ইশাঃ- কি কাজ বলো…
রাত্রীঃ- তুমি জুলির মত চলতে শুরু করো।
ভাইয়া জুলির কি পছন্দ করতো কি করতো না..
জুলি কি পছন্দ করতো কি করতো না.. এই সব কিছু তুমি করবে দেখবে ভাইয়া তোমার মাঝে জুলিকে খুঁজতে শুরু করবে আর এক সময় জুলিকে ভুলে গিয়ে তোমাকে ভালোবাসবে…
ইশাঃ- কিন্তু আমি কিভাবে জানবো জুলি কি করতো আর না করতো…
রাত্রীঃ- সেসব কিছু ভাইয়ার কাছে আছে…
ইশাঃ- ভাইয়ার কাছে আছে মানে?!
রাত্রীঃ- ভাইয়া সব কিছু একটা ডাইরিতে লিখে রেখেছে…
ইশাঃ- তাহলে প্লিজ বোন আমার ওটা আমাকে এনে দাও…
রাত্রীঃ- কিন্তু একটা সমস্যা আছে…
ইশাঃ- আবার কিসের সমস্যা?!
রাত্রীঃ- ডাইরির অনেকটা অংশ পুরে গেছে…
ইশাঃ- আরে ব্যাপার না যেটুকু পুরে গেছে সেই টুকু আমি আমার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবো আশা করি তোমার ভাইয়ার ভালো লাগবে।
চলবে………..
You will be redirected in 15 second(s).