ভালোবাসার মানুষের অভিনয় পর্ব=৪

গল্প – অভিনয়

Part – 04

writer – J$_ArFin_SuMon

আরে ব্যাপার না ডাইরীর যেটুকু পুরে গেছে সেই টুকু আমি আমার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবো আশা করি তোমার ভাইয়ার ভালো লাগবে…

রাত্রীঃ- তাহলে যাও গিয়ে ডাইরি নিয়ে কাজ শুরু করে দাও…

ইশাঃ- আরে আমি কি জানি নাকি তোমার ভাইয়া ডাইরি কোথায় রেখেছে..তুমি আমাকে ডাইরি এনে দিবে…

রাত্রীঃ- আমি পারবো না ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে খুব মারবে…

ইশাঃ- তুমি যে রকির সাথে প্রেম করো সেটা বাসায় জানে?

রাত্রীঃ- নাহ কেও জানেনা…

ইশাঃ- যদি আমি জানিয়ে দেই তাহলে কেমন হবে?

রাত্রীঃ- প্লিজ ভাবি আমার সাথে এমন করো না…

ইশাঃ- তাহলে চুপচাপ আমাকে ডাইরিটা এনে দাও।

রাত্রীঃ- আচ্ছা এনে দিবো কিন্তু এর জন্য কিন্তু আমাকে পরে সাহায্য করতে হবে…

ইশাঃ- হ্যা বুনু তোমাকে সাহায্য করবো..তুমি যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি ডাইরি নিয়ে আস…

রাত্রী ডাইরি আনতে চলে গেলো…

ইশা চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এটা ওটা ভাবছে…

কিছুক্ষণ পর রাত্রী চলে এসেছে…

রাত্রীঃ- এই নাও তোমার ডাইরি।।

ইশা ডাইরিটা নিয়ে বললো…

ইশাঃ- যাও অনেক রাত হয়ে গেছে এখন রুমে গিয়ে ঘুমাও…

রাত্রীঃ- আর তুমি কি করবে??

ইশাঃ- এখন গিয়ে তোমার ভাইয়াকে ইচ্ছা মত পিটানি দিবো…

ইশা রাত্রীকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও রুমে চলে গেল..

রুমে গিয়ে দেখে রিয়ান ঘুমিয়ে গেছে…

ঘুমন্ত অবস্থায় রিয়ানকে কেমন লাগে সেটা আমি জানিনা তাই বলতে পারলাম না…

ইশা অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো..তারপর ইশার চোখেও ঘুম ভর করলো…

কিন্তু ঘুমালে চলবে না জুলিকে প্রথম রিয়ান কি অবস্থায় দেখেছিলো সেটা জানতে হবে আর কাল সেই মত কাজ করতে হবে.…

ইশা ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলো…

তবে বেশি পড়লো না কারণ তাহলে সব গুলিয়ে ফেলতে পারে…

কিছুটা পরে ডাইরিটা নিজের ব্যাগের মধ্যে রেখে রিয়ানের দিকে মুখ করে ইশা শুয়ে পড়লো।

অনেকক্ষণ রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো…

তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ইশা

ঘুমিয়ে গিয়েছিলো সেটা ইশা নিজেও জানেনা

ফজরের আজান শুনে ইশার ঘুম ভাঙল।

ইশা উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো…

আর অপেক্ষা করছে রিয়ান কখন ঘুম থেকে উঠবে…

রিয়ানের ঘুম ভাঙল উঠে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নিলো

আজ বাসা কেমন জেনো চুপ হয়ে আছে

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো কাওকে পাচ্ছে না সারা বাসা খুঁজলো কিন্তু বাসায় কেও নেই…

রিয়ান ভাবলো হয়তো ছাঁদে আছে তাই রিয়ান ছাঁদে চলে গেলো কিন্তু সেখানেও কেও ছিলো না..!তারপর নিচে চলে আসলো বাসায় ছোট একটা বাগান আছে

রিয়ান নিচে এসে দেখে কেও একজন কালো শাড়ি পরে বসে আছে…

রিয়ান অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে…

কারণ রিয়ান যেদিন প্রথম জুলিকে দেখেছিলো সেদিন জুলিও ঠিক একই রকমভাবে কালো শাড়ি পরে বাগানে বসে ছিলো…

রিয়ানের মধ্যে এক প্রকার ঝড় শুরু হয়ে গেছে

রিয়ান আস্তে আস্তে এগুতে লাগলো কে সেটা দেখার জন্য..

কাছে গিয়ে পেছন থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে কাঁধে হাত দিলো..

সে পিছনে ফিরে তাকালো সাথে সাথে রিয়ুন কাধ থেকে হাত নামিয়ে নিলো…

ইশাঃ- কি হলো কাধ থেকে হাত নামিয়ে নিলে কেনো? আর দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?

রিয়ান কিছু বলছে না চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে…

ইশাঃ- কি হলো কিছু তো একটা বলো…

ভালো লাগছে আমাকে?

রিয়ান মাথা নাড়িয়ে না উত্তর দিলো…

রিয়ান এমন উত্তর দিবে ইশা সেটা আশা করেনি…

ইশা মন খারাপ করে বললো…

ইশাঃ- তুমি একটা পচা হুহ তোমার সাথে কথা নেই।।

এই কথা বলে ইশা চলে আসলো…

ইশার পেছন পেছন রিয়ান আসলো…

এসে দেখে আব্বু আম্মু রাত্রী সবাই আছে…

ইশা আম্মুর পাশে বসে কান্না করছে একদম বাচ্চাদের মত।

ইশাঃ- জানো আম্মু তোমার ছেলে বলেছে আমাকে নাকি ভালো লাগছে না…

আম্মুঃ- কে বলেছে ভালো লাগছে না তোকে অনেক ভালো লাগছে একদম লক্ষি একটা বউ…

ইশাঃ- আম্মু আমাকে আর বলতে হবে না আমি জানি আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে..ভালো লাগলে তো তোমার ছেলে বলতই হনুমান একটা…

আম্মুঃ- আরে আর কাদিস না চল খাবার বানাবো চল..

ইশাঃ- আজকে আমি সবার জন্য রান্না করবো তোমরা যাও গল্প করো আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি…

আম্মুঃ- নাহ সবে তো বউ হয়ে এসেছিস এখনো তেমন কিছুই জানিস না তাই আমি থাকবো তোর সাথে সব শিখিয়ে দিয়ে আমার ছুটি…

আম্মু আর ইশা মিলে খাবার রান্না করতে চলে গেলো..

রিয়ানের আজ আরো বেশি করে জুলির কথা মনে পড়ছে আর যতবার জুলির কথা মনে পড়ছে ততবারই কোনো না কোনো ভাবে ইশাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে…

পেছন থেকে দেখলে ইশা আর জুলির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই,,কিন্তু সামনে থেকে দেখলেই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে..তাই ইশা যখন অন্যদিকে ঘুরে কাজ করছে রিয়ান উকি দিয়ে দেখছে। আর এটা তখন রাত্রীর নজরে পড়লো…

রাত্রীঃ- কিরে ভাইয়া ভাবির প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?

বউ তো তোর চুরি করে দেখার কিছু নেই যা সামনে থেকে গিয়ে দেখে আয়..॥

রাত্রীর কথায় অনেক টা লজ্জায় পড়ে গেলো রিয়ান…

রাত্রীকে একটা চড় দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো…

এসে জুলির ছবি দেখছে…

আর নিরবে কান্না করে যাচ্ছে…

এইভাবে কতক্ষণ গেলো,

তারপর আবার নিচে চলে এলো…

এসে খাবার টেবিলে বসে পড়লো…

তার কিছুক্ষণ পর সবাই খাবার টেবিলে চলে আসলো…সবাই খেতে বসেছে…

খাবার মধ্যে হঠাৎ ইশা চিৎকার করে বললো…

ইশাঃ- ঝাল ঝাল পানি পানি।

রিয়ান নিজের অজান্তেই গ্লাসে পানি ভরে ইশাকে খাইয়ে দিলো…

জুলিও একদম ঝাল সহ্য করতে পাড়তো না,

একদিন ফুসকা খেতে গিয়ে

এইরকম এক কান্ড হয়েছিলো

ঝাল একটু বেশি হয়ে গেছিলো

জুলি সেটা খাবার পর চিৎকার করতে শুরু করে আর রিয়ান তখন ঠিক এইভাবেই পানি খাইয়ে দিয়েছিলো…

অনেকদিন পর ঠিক একইরকম ঘটনায় রিয়ান কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না,

যখন এটা বুঝতে পারলো সে জুলিকে নয় ইশাকে পানি খাইয়ে দিয়েছে তখন না খেয়েই উঠে গেলো…

ছেলের এমন কান্ড দেখে ওর আব্বু-আম্মু আবারো অবাক আর কিছুটা খুশিও হয়েছে…

আব্বুঃ- তুই পারবি মা তুই পারবি আমার

ছেলেকে ঠিক করতে তুই পারবি,

ইশাঃ- তোমরা দোয়া করো আমি যেনো আমার স্বামীকে সুস্থ জীবন দিতে পারি।

কয়েকদিন পর…

ইশাঃ- এই শুনো না একটু…

রিয়ান ফোন টিপছিলো এমন সময় ইশা ডাক দিয়ে বললো..

রিয়ান ফোন ছেড়ে ইশার দিকে তাকালো…

ইশাঃ- চলো না আজ কোথাও ঘুরে আসি প্লিজ প্লিজ প্লিজ..

রিয়ান মাথা নেড়ে উত্তর দিলো সে যাবে না…

ইশাঃ- কেনো যাবে না প্লিজ আমার সাথে চলো সেই লেকের ধারে যাবো দুজন একসাথে হাটবো সন্ধ্যায় ফুসকা খাবো আসার সময় রিক্সায় আইসক্রিম খাবো চলো না চলো…

ইশা যা যা বললো এইই সব কিছু জুলি বলতো…

ইশাঃ- কি হলো বলো যাবে বলো…

রিয়ান এইবার আর না করতে পারলো না

মাথা নেড়ে উত্তর দিলো সে যাবে…

ইশাঃ- এইতো আমার লক্ষি বর উম্মাহ…

হাম্মি দিয়েই ইশা উধাও…

বিকেল বেলা ইশা একটা নীল শাড়ি পড়েছে আর রিয়ানের জন্য নীল পাঞ্জাবী।

নীল রঙ রিয়ানের পছন্দ আর ওরা আগে যখন কোথাও ঘুরতে বের হতো বেশিরভাগ সময় নীল রঙের জামা পড়েই বের হতো…

ইশাকে নীল রাঙের শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছিলো রিয়ান একবার তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারছিলো না..ঠিক যেনো জুলির প্রতিচ্ছবি…

শুধু ফেস কাটিংয়ে কোনো মিল নেই তাছাড়া পুরো জুলি…

ইশাঃ- এই আর কতক্ষণ অমন হা করে তাকিয়ে থাকবে?

আমাদের বের হতে হবে তো…

ইশার এই কথা শুনে রিয়ান বাস্তবে ফিরে আসে…

ইশা রিয়ানকে পাঞ্জাবিটা দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি পরে নাও দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো..রিয়ান অল্প একটু সময়ের মধ্যেই রেডি হয়ে নিলো…

তারপর বাসা থেকে বের হলো.. ইশা যখন রিক্সা ডাকছিলো তখন রিয়ান ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলো গাড়ি থাকতে রিক্সাতে কেনো যাবে…

ইশাঃ- কারণ রিক্সাতে ঘুরতে বেশি ভালো লাগে তাই..

এই দেখো রিক্সাতে আমরা পাশাপাশি বসতে পারছি কিন্তু গাড়িতে সেটা সম্ভব হতো বলো?

তুমি গাড়ি চালাতে আর আমাকে দূরে বসে থাকতে হতো যেটা আমার একদম-ই ভালো লাগে না….

তাই আমি রিক্সাতেই যাবো…

দুজন মিলে রিক্সাতে উঠলো…

ইশা যখন রিয়ানের হাত টা শক্ত করে ধরলো তখন রিয়ানের কাছে মনে হলো জুলিই ওর পাশে বসে আছে..সেই চিরোচেনা একটা ঘটনা দুজন রিক্সাতে যাচ্ছে জুলি রিয়ানের হাত ধরে বসে আছে আর দুজন নানান রকম গল্প করছে।

চলবে…………….

 

You will be redirected in 15 second(s).

About Numan Ahmed

Check Also

অশরীরীর অভিশাপ

রাত তখন প্রায় বারোটা। গ্রামটি নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর মাঝে মাঝে বাতাসের ফিসফিসানি। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *