ভালোবাসার মানুষের অভিনয় পর্ব=২

গল্প – অভিনয়

Part – 02

writer – J$_ArFin_SuMon

রাত্রীর কাছে সব কিছু শুনে ইশা নিজেও কান্না করে দিছে…

রাত্রীঃ- আরে আপু তুমি কাঁদছো কেনো?!

ইশাঃ- আমাকে একদম আপু বলবে না ভাবি বলবে ভাবি..

রাত্রীঃ- কিন্তু ভাইয়া…

ইশাঃ- তোমার ভাইয়া রাজি হোক আর না হোক আমি তোমার ভাবি হতে চলেছি সেটা তুমি জেনে রাখো..

রাত্রীঃ- আপু তুমি আমার ভাইয়াকে চিনো না ও কাওকে বিয়ে করবে না..

ইশাঃ- আবার আপু? বলছি না আমাকে ভাবি বলবে..

আর শোন তোমাদের বাসার ঠিকানাটা দাও আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাচ্ছি…

রাত্রী ওদের বাসায় ঠিকানা দিয়ে দিলো…

ইশাঃ- শোন রাত্রী এইসব কিছুই এখন কাওকে বলবে না,,,আমি সব বলবো হ্যাঁ জানি তোমার ভাইয়াকে মানাতে কষ্ট হবে তবে ব্যাপার না তোমার ভাইয়া ঠিক মেনে যাবে..

এই কথা বলে ইশা চলে আসলো…

ইশা ওদের বাসায় এসে ওর আব্বু আম্মুকে ডাকতে শুরু করলো…

ইশার আম্মুঃ- কিরে মা এমনভাবে চেঁচাচ্ছিস কেনো?!

ইশাঃ- আম্মু আমি বিয়ে করবো…

ইশার আম্মুঃ- সেটা তো খুব ভালো কথা…

আমি তোর আব্বুকে এখনি বলছি রকির আব্বুর সাথে কথা বলতে…

ইশার আম্মুর কথা শুনে ইশা রেগে একদম আগুন…

ইশাঃ- আম্মু আমি কি একবারো বলেছি আমি অই রকি বদমাইশকে বিয়ে করবো..পুরো কথা না জেনে না শুনে কেনো অন্যটা ভেবে বস বল তো?!

ইশার আম্মুঃ- তাহলে কি তোর আব্বুকে বলবো তোর জন্য ছেলে দেখতে…

ইশাঃ- নাহ আম্মু ছেলে আমার দেখাই আছে আমরা সবাই ছেলের বাসায় যাবো…

ইশার আম্মুঃ- সে কিরে কোন ছেলে? ছেলের বাসা কোথায়?ছেলে কি করে?!

ইশাঃ- এতো সব কিছু তোমার এখন না জানলেও চলবে আপাতত চলো আমরা ছেলের বাসা থেকে ঘুরে আসি..আর আম্মু শোনো তোমার আর আব্বুর ছেলে পছন্দ হোক আর না হোক আমি কিন্তু অই ছেলেকেই বিয়ে করবো।

ইশার আম্মুঃ- তাহলে আমাদের যাওয়ার দরকার কি? আর ছেলে দেখারই বা কি দরকার তুই নিজেই তো সব ঠিক করে ফেলেছিস এখন বিয়ে টা তুই নিজেই করে নে,,,

ইশাঃ- আরে আম্মু তুমি রাগ করছো কেনো?!

আমি তোমাদের একমাত্র মেয়ে আমার জামাইকে তোমরা দেখবে না সেটা হয়,,আব্বু কে বলো কাল আমরা ছেলের বাসায় যাচ্ছি…

মেয়ের জেদ সম্পর্কে ইশার আম্মু ভালো করেই জানে..তবে সে এই বিষয়ে কিছুতেই সায় দিতে পারছে না..

তার কেনো জানি মনে হচ্ছে তার মেয়ে ভুল করতে যাচ্ছে..? তবে একবার ছেলেকে দেখতে গেলো তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না,,তাই ইশার আম্মু বললো.. ইশার আম্মুঃ- আচ্ছা ঠিক আছে কালকে আমরা সবাই যাচ্ছি..?!

ইশা তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা কিস দিয়ে ওর রুমে চলে গেলো..এখন বারবার শুধু রিয়ানের কথায় মনে পড়ছে..একদিনের দেখাতেই ইশা রিয়ানকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।

সেদিন রাতে ইশা আর ঘুমাতে পারলো না…

পরদিন দুপুরবেলা ইশা ও ওর আব্বু-আম্মু রিয়ানদের বাসায় গেলো…

কলিংবেল চাপতেই রাত্রী এসে দরজা খুলে দিলো…

রাত্রীঃ- আরে আপু তোমরা?? আমি তো ভাবতেই পারছি না তুমি সত্যি সত্যি আমাদের বাসায় আসবে..

আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমার ভাইয়াকে নিয়ে মজা করছো…

ইশাঃ- এখন তোমার ভাবনা পাল্টেছে তো?!

রাত্রীঃ- হ্যাঁ আাা না না ভাবি…

ইশাঃ- এই তো আমার লক্ষি ননদের মত কথা..

যাও গিয়ে তোমার আব্বু আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসো..

রাত্রী ইশাদের বসতে দিয়ে রিয়ানের আব্বু আম্মুকে ডাকতে চলে গেলো…

কিছুক্ষণ পর…

রিয়ানের আব্বু আম্মু আসলো…

ইশা গিয়ে তাদের সালাম করলো…

আব্বু আম্মুঃ- আরে থাক থাক মা সালাম লাগবে না…

ইশার আব্বু বললো..

ইশার আব্বুঃ- হ্যাঁ তা যার জন্য আসা

আপনার ছেলে আর আমার মেয়ের চার হাত এক করে দিতে চাই..আসলে আমরা আপনার ছেলেকে দেখিনি..আমাদের মেয়েই আপনার ছেলেকে দেখে পছন্দ করেছে…

আব্বুঃ- আপনারা কি আমার ছেলের সম্পর্কে সব কিছু বিস্তারিত জানেন?!

ইশাঃ- আব্বু ওনারা না জানলেও চলবে আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে সংসার করবো ওনারা না…

মেয়ের এমন কথা শুনে ইশার আব্বু আম্মু আর কিছু বলতে চেয়ে আর কিছু বলতে পারলো না,,,

আব্বুঃ- কিন্তু সব কিছু জেনে একটা ডিসিশন নেওয়া দরকার যাতে করে পরে কোনো ফ্যামিলি বলতে না পারে আমরা কিছু লুকিয়েছি…

ইশার আব্বুঃ- হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে বলুন আপনার ছেলের সম্পর্কে।

আব্বুঃ- আসলে আমার ছেলে কথা বলতে পারে না,,এমনিতে সব ঠিক আছে শুধু চুপচাপ থাকে।

আব্বুর কাছে এমন কথা শুনে ইশার আব্বু আম্মু কাশি দিয়ে উঠলো…

ইশার আম্মুঃ- আচ্ছা আমরা তাহলে আজকে যাই

বাসায় গিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের জানিয়ে দিবো…

তারা আর বেশিক্ষণ দেড়ি না করে চলে গেলো…

আব্বুঃ- ধুর শুধু শুধু অপমানিত হওয়া..আর রাত্রী তোর কি আক্কেল জ্ঞান কিছুই নেই কোথাকার কোন মেয়ে এসে তোকে কি বললো আর তুই ধুর…

শোন রাত্রী এরপর থেকে কেও কিছু জিজ্ঞাস করলে

বলবি রিয়ান বিবাহিত আর ওর সংসার আছে ও নিজের মত করে ওর সংসার সাজিয়ে নিয়েছে…

আর রিয়ান এখন কোথায় রে?!

রাত্রীঃ- ভাইয়া তো একটু আগে বাইরে চলে গেছে…

আব্বুঃ- আচ্ছা ওকে এই বিষয়ে কিছু বলিস না

বললে আবার মন খারাপ করে বসে থাকবে…

অন্যদিকে ইশাদের বাসায়…

ইশার আব্বুঃ- ইশা তুই কি আর কোনো ছেলে খুঁজে পেলি না বিয়ে করার মতো?

এমন একটা ছেলেকে তুই পছন্দ করলি যে কিনা কথাই বলতে পারে না…

ইশাঃ- আমি এতো কিছু শুনতে চাই না আমি রিয়ানকে বিয়ে করবো এটাই আমার শেষ কথা।

ইশার আম্মুঃ- কিন্তু মা ঐই ছেলেকে বিয়ে করলে তোর জীবন বরবাদ হয়ে যাবে…

ইশাঃ- বরবাদ নয় আমার জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।

ইশার আব্বুঃ- কিন্তু আমরা তো ছেলেটাকে দেখলামইই না…

ইশাঃ- আমার কাছে ছবি আছে আমি দেখাচ্ছি…

সেদিন ইশা যখন রিয়ানকে দেখেছিলো তখন কয়েকটা ছবি তুলে রেখেছিলো…

এই দেখো রিয়ান…

ইশার আব্বু আম্মু ছবি দেখে বললো…

– এমনিতে তো সব ঠিক আছে কিন্তু কথা হলো…

ইশাঃ- উফফ আব্বু আম্মু এই কথার বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও তো…

ও কথা বলতে পারেনা এতে তো

আমারই ভালো হলো আব্বু,,,

ইশার আব্বুঃ- সেটা কিভাবে?!

ইশাঃ- জানোই তো সংসারে একটু আটকু ঝগড়া লাগে সেটা লাগবে না,একদম শান্তিতে সংসার করতে পারবো..তোমরা প্লিজ আর না করো না,,পারলে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে দিয়ে দাও…

ইশার আব্বুঃ- পরে কিন্তু এটা বলতে পারবি না যে আমরা কেনো তোকে আটকায়নি তোর জীবন আমাদের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে…

ইশাঃ- নাহ আব্বু এই কথা কোনো দিন তোমাদের শুনতে হবে না সেটা আমি তোমাদের বলছি।

ইশার আব্বুঃ- তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। ফ্যামিলি টাও ভালো…

পরদিন আবার ইশা ও ওর আব্বু আম্মু রিয়ানদের বাড়িতে…

আজ রিয়ান বাসায় ছিলো…

যখন বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে রিয়ান চুপচাপ সব শুনছে…

ইশার আব্বুঃ- অনেক ভেবে দেখলাম আর আমরা সিধান্ত নিলাম ওদের চার হাত এক করেই দেওয়া যাক…

আব্বুঃ- হ্যাঁ আমরাও তাই ভাবছি আপনার মেয়েও অনেক লক্ষি..আর আমাদের মেয়ে আছে আর কয়েকদিন পর তো শশুড় বাড়ি চলে যাবে।

রাত্রীঃ- আব্বু তুমি আমাকে পর করে দিতে চাচ্ছ।

আব্বুঃ- ব্যাপার সেটা না মেয়েদের আসল ঠিকানা তার শশুড় বাড়ি বাবা মা যতই আগলে রাখুক একদিন শশুড় বাড়ি যেতেই হয়…

ইশাঃ- আমি রিয়ানের সাথে আলাদা করে একটু কথা বলতে চাই…

ইশা রিয়ানকে নিয়ে চলে গেলো রিয়ানও মনে হয় এটাই চাচ্ছিলো।

তাই ইশার সাথে চলে গেলো আর ছাঁদে গেলো দুজন…

ইশাঃ- আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লেগেছে?

রিয়ান কোনো উত্তর দিচ্ছে না…

ইশাঃ- অহহ তুমি তো আবার কথা বলতে পারো না,,

আমি বলছি শোন জুলি তো আর বেঁচে নেই জুলির স্মৃতি নিয়ে আর কতদিন বাঁচবে বলো…

তার থেকে ভালো তুমি জুলিকে ভুলে যাও জুলির জায়গাটা আমাকে দাও তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।

ঠাসসস ঠাসসস…

রিয়ান ইশার দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিলো..

কিছু বলতে চাচ্ছে রিয়ান কিন্তু বলতে পারছে না

তবে চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে..

ইশা ভয় পেয়ে

কি করবে সেটা বুঝতে পারছে না।

কিন্তু কি হলো ইশার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করলো..

রিয়ানের গালে একটা কিস করে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো..

রিয়ানের কেমন জানি একটা অনুভূতি হলো যেমনটা জুলির ছোঁয়ায় হতো ঠিক তেমন টাই…

ইশা নিচে চলে আসছে কিছুক্ষণ পর রিয়ান আসলো..

ওর আব্বু ওকে জিজ্ঞাস করলো…

আব্বুঃ- রিয়ান তুই বিয়ে করবি?

রিয়ান হ্যাঁ না কিছুই বলছে না…

রিয়ানের নিরবতাকে সবাই হ্যাঁ হিসেবে ধরে নিলো…

রিয়ান একটা ঘোরের মধ্যে আছে

ইশার ছোঁয়ার জুলিকে অনুভব করতে পারছিলো তখন…

চলবে………….

 

About Numan Ahmed

Check Also

অশরীরীর অভিশাপ

রাত তখন প্রায় বারোটা। গ্রামটি নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর মাঝে মাঝে বাতাসের ফিসফিসানি। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *