ভালোবাসার মানুষের অভিনয় পর্ব=১

গল্প – অভিনয়

Part – 01

writer – J$_ArFin_SuMon

এই তিশা দেখছিস ছেলেটা কত কিউট…(ইশা)

তিশাঃ- দেখ ইশা আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আর আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকেই ভালোবাসি এখন কোন ছেলে কিউট কোন ছেলে স্মার্ট সেটা দেখার আমার কোনো সময় নেই..

ইশাঃ- আরে এতো রাগছিস কেনো ছেলেটা সত্যিই অনেক কিউট একটু তাকিয়ে দেখনা?? আরে তোর নাহিদের থেকে বেশি কিউট..

ইশার কথায় তিশা অনেকটা বিরক্ত নিয়েই ছেলেটার দিকে তাকালো…

তিশাঃ- হ্যাঁ কিউট তাতে আমার কি? আর শোন তুই আমার নাহিদ কে একদম টানবি না বলে দিলাম..

আমার নাহিদও অনেক কিউট শুধু আমি নাহিদকে বেশি ভাব ধরতে দেই না,,তাই নাহিদকে একটু ক্ষেত ক্ষেত লাগে কিন্তু ও এই ছেলের থেকে বেশি কিউট….

ইশাঃ- শোন তোর নাহিদ যদি ভাবের ভাব ও নেয় না তাও এই ছেলের ধারের কাছেও যেতে পারবে না….

তিশাঃ- আচ্ছা যেতে পারবে না সেটা মানলাম কিন্তু তুই হঠাৎ এই ছেলেকে নিয়ে পড়লি কেনো?

ইশাঃ- সেটা জানিনা কেনো পড়লাম কিন্তু এই ছেলেকে নিয়ে যতবেশি বলছি ততই আমার ভালো লাগছে।

তিশাঃ- আমার তো মনে হচ্ছে তুই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছিস…

ইশাঃ- আরে সেইসব কিছুই নারে..দেখ না ছেলেটার গাল দুটো কি গুলু গুলু মনে চাচ্ছে একটু টেনে দেই…

আর ঠোঁট দুটো দেখ একদম স্টবেরি।

তিশাঃ- আরে বাহ এতো কিছু যা না যা একটু টেস্ট করে আয়….

ইশাঃ- চুপ..কি বলছিস এইসব বেয়াদবের মতো..

তবে আমার মনে হচ্ছে আমার লাইফে ভালোবাসার আগমন ঘটতে চলেছে…

তিশাঃ- আচ্ছা তাহলে চল যাই ছেলেটাকে গিয়ে প্রপোজ করে আসি…

ইশাঃ- ধুর সেটা কিভাবে হয়? প্রথম দেখাই প্রপোজ আগে ছেলেটার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে আর এতো কিউট ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে তাই আজ প্রপোজ করলে যদি রিজেক্ট করে দেয় তাহলে তো আমি ছ্যাকা খাবো তাই আজ প্রপোজ করবো না কিন্তু এইই ছেলের নাম আর ঠিকানা আমাকে নিতেই হবে।

তিশাঃ- তার মানে কি তুই এখন ছেলেটার কাছে যাবি নাকি কথা বলার জন্য??

ইশাঃ- হ্যাঁ যাবো তুই আসলে আসতে পাড়িস আর যদি না আসিস তাহলে আমি একাই যাবো…

তিশাঃ- আরে না আমি যাবো তো তোর সাথে তোর কিউট বালক কি বলে..দেখতে হবে না।

ইশা আর তিশা ছেলেটার কাছে চলে গেলো..

দূর থেকে ছেলেটা দেখতে যত না কিউট কাছ থেকে তার থেকে বেশি কিউট..

ইশা আর তিশা ছেলেটার পাশে দাঁড়ালো

তাদের দেখে ছেলেটা একটু সরে গেলো…

তিশাঃ- কিরে ইশা কিছু বল..

ইশাঃ- কি বলবো কিভাবে শুরু করবো কিছুই তো ভেবে পাচ্ছি না…

তিশাঃ- আরে ছেলেটার সামনে যাবি চুল গুলো ঠিক করবি তারপর হাত বাড়িয়ে বলবি হাই আমি ইশা তুমি দেখতে অনেক কিউট একদম কমলালেবুর মত…

ইশাঃ- ধুর এটা আবার কেমন প্রশংসা হলো??

তিশাঃ- তাহলে বলবি আমি ইশা তোমাকে আমার মনের মধ্যে রাখতে চাই থাকবে…

ইশাঃ- আরে এটাও কেমন জানি লাগে আমার কাছে…

তিশাঃ- তাহলে বলবি এই ছেলে তোকে আমার ভালো লাগছে আমার সাথে প্রেম করবি?

ইশাঃ- আরে রাখতো তোর আজাইরা প্যাঁচাল আমি আমার মতে করে বলবো তুই শুধু আমার সাথে থাকবি।

তিশাঃ- আরে তুই আমার প্রেমের সময় আমাকে সাহায্য করেছিলি আমিও করবো আমি আছি তোর সাথে..

ইশা ছেলেটার সামনে দাঁড়ালো…

তারপর…

ইশাঃ- কিছু মনে না করলে তোমার নাম জানতে পারি??

ছেলেটা কোনো উত্তর দিলো না…

ইশাঃ- এই শুনতে পাচ্ছ আমি কি তোমার নাম জানতে পারি?

ছেলেটা কোনো উত্তর না দিয়ে একটু সাইডে চলে গেলো…

ইশাঃ- আরে আমি জানি তুমি কিউট তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে আমি সেটাও জানি কিন্তু এতো ভাব দেখানোর কি আছে? আমি জাস্ট শুধু তোমার নাম জানতে চাচ্ছি আর কিছু না…

ছেলেটা এর পরেও আর কোনো উত্তর দিলো না..

কতক্ষণ পর তাদের মাঝে আরো একটি মেয়ে আসলো..

এসে বললো..

– এই ভাইয়া আমার হয়ে গেছে চল আমরা বাসায় যাবো।

এই বলে মেয়েটা ছেলেটাকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলো..

ইশা শুধু রাগে ফুঁসছে এইভাবে তিশার সামলে অপমানিত হতে হলো..তবে ব্যাপার না এইই রকম ছেলেরা এমনি হয়..

ইশা লক্ষ্য করলো তিশা কিছু একটা ভাবছে…

ইশাঃ- কিরে তিশা এতো কি ভাবছিস..

তিশাঃ- ভাবছি মেয়েটাকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি..

ইশাঃ- এই বল বল কোথায় দেখেছিস যদি আবার দেখা পাই তাহলে ওর থেকেই ওর ভাইয়ার সব খবর নিতে পারবো…

তিশাঃ- হ্যাঁ মনে পড়েছে একবার আমি নাহিদের সাথে ওর ছোট ভাইয়ার কলেজে গেছিলাম সেখানে ওর ভাইয়ার সাথে ওকে দেখেছি…

ইশাঃ- তাহলে তো হয়েই গেলো আমরা কালেকেই অই কলেজে যাচ্ছি আর সব খবর বের করছি…

তিশাঃ- সেটা না হয় গেলাম,,কিন্তু জানিস ইশা ছেলেটাকে আমার স্বাভাবিক মনে হলো না..,

ইশাঃ- সে যেমনি হোক অবিবাহিত হলেই আমার চলবে..

.

পরদিন ইশা আর তিশা মিলে নাহিদের ছোট ভাইয়ের কলেজে গেলো..

তারপর অনেক খুঁজে কালকেই সেই মেয়েটাকে বের করলো..

ইশাঃ- এই আপু শুনছো..

মেয়েঃ- হ্যাঁ আপু আমাকে বলছেন??

ইশাঃ- হ্যাঁ তোমাকে বলছি..

মেয়েটা ইশার কাছে আসলো..

মেয়েঃ- হ্যাঁ আপু বলুন?

ইশাঃ- তোমার নাম কি?

মেয়েঃ- জ্বি আমার নাম রাত্রী..আর আমার বয়ফ্রেন্ড আছে তাই যে আপনাদের পাঠিয়েছে তাকে গিয়ে বলুন আমার কথা ভুলে যেতে..

ইশাঃ- এই একদম মারবো টেনে একচর এইটুকু বয়সে প্রেম..আর এতো বেশি বুঝো কেনো? আর শুনো আমি কারো জন্য তোমার কাছে আসিনি তোমার কাছে এসেছি কিছু খোঁজ খবর নিতে..

রাত্রীঃ- হ্যাঁ বলুন কি..

ইশাঃ- কালকে অই ফটো স্টুডিও থেকে যে একটা ছেলের সাথে গাড়ি করে চলে গেলে ছেলেটা তোমার ভাইয়া তাই না??

রাত্রীঃ- হ্যাঁ আমার ভাইয়া কিন্তু সেটা জেনে আপনি কি করবেন?

ইশাঃ- তোমার ভাইয়ার নাম কি?

রাত্রীঃ- আরিফুল ইসলাম রিয়ান..

ইশাঃ- আচ্ছা রাত্রী একটা পারসোনাল কথা জিজ্ঞাস করবো..

রাত্রীঃ- কি?

ইশাঃ- তোমার ভাইয়া কি বিয়ে করেছে?

রাত্রীঃ- নাহ

রাত্রীর কথা শুনে ইশা আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো…

ইশাঃ- আচ্ছা আমি যদি তোমার ভাইয়ার বউ হই তবে ভাবি হিসেবে আমি কেমন হবো..

ইশার কথা শুনে রাত্রীর মুখ কেমন জানি ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো..

ইশাঃ- কি হলো রাত্রী তুমি কিছু ভাবছো??

রাত্রীঃ- আসলে আপু আমার ভাইয়া কথা বলতে পারে না..

রাত্রীর কথা শুনে এইবার ইশার মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো..

কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার হেসে বললো..

ইশাঃ- কথা বলতে পারে না তো কি হয়েছে আমি তোমার ভাবি হতে চাই তোমাদের বাসার ঠিকানা দিবে আমাকে??

রাত্রীঃ- কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হবে না আমার ভাইয়া বিয়ে করবে না..

ইশাঃ- কেনো বিয়ে করবে না কেনো?

রাত্রীঃ- আসলে আমার ভাইয়ার জীবনে কিছু ভয়াবহ অতীত আছে সেটা কিছুতেই ভাইয়া ভুলতে পারছে না..

ইশাঃ- আচ্ছা আমাকে বলবে কি এমন অতীত?

রাত্রীঃ- আমার বলতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু সব জেনে তুমি কি করবে?

ইশাঃ- সেই সব পরে বলবো আগে তুমি বলো..

তারপর রাত্রী বলতে শুরু করলো..

রাত্রীঃ- আসলে আমার ভাইয়াকে যেমন দেখছো তেমন না..একজন স্বাভাবিক মানুষ ছিলো আমার ভাইয়া কথা বলতো হাসতো কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেলো..

আসলে আমার ভাইয়া একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো.?

নাম ছিলো সালমা আক্তার জুলি..

জুলি আপুটা আমার ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসতো..৫বছরের রিলেশন ছিলো তাদের এই ৫বছরে ঝগড়া করেও কেও ১মিনিটের জন্য আলাদা হয়নি..কেও কাওকে ছাড়া থাকতে পাড়তো না..

সব সময় কথা বলতো ঘুরতে যেতো আরো অনেক কিছুই করতো ছোটখাটো একটা সংসার বলতে পারো তুমি..বেশি কিছু বলবো না আমার ভাইয়ার এই অবস্থা কি করে হলো সেটা বলছি বরাবরের মতো ভাইয়া আর জুলি আপু ঘুরতে বের হয়েছিলো..জুলি আপু জেদ করেছিলো পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরতে যাবে ভাইয়া না করেছিলো কিন্তু আপু শুনেনি..

তাড়া ঘুরতে গেলো..যেহেতু ভাইয়া পাহাড়ি রাস্তা সম্পর্কে তেমন অবগত ছিলো না তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে..

হ্যাঁ সেদিন আমার ভাইয়া ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও জুলি আপুর মৃত্যু ভাইয়া নিজের চোখে দেখেছিলো

অনেক চেষ্টা করেও জুলি আপুকে বাঁচাতে পারেনি

জুলি আপুর মৃত্যুর পর ভাইয়া কেমন জানি হয়ে যেতে থাকে একদম।

একা হয়ে যায় কারো সাথে কথা বলতো না সময়মত খেত না সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বসে থাকতো..

প্রথমে ভাইয়া খুব কম কথা বলতো..

আব্বু আম্মু ভাবছিলো জুলি আপুর রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলোর কারণে ভাইয়া কিছু ভুলতে পাড়ছে না।

তাই একদিন সব কিছু মানে জুলি আপুর দেওয়া গিফট তাদের সব ছবি পুড়িয়ে ফেলছিলো যখন ভাইয়া সেটা দেখলো ততক্ষণে অনেক কিছুই পুড়ে গেছিলো কিন্তু প্রায় জিনিস আধা পোড়া ছিলো..

সেই সব গুলো ভাইয়া যত্ন করে রেখে দিছে আর ভাইয়া কেনো জানিনা সেদিন থেকে কোনো কথা বলেনা..

আর মজার ব্যাপার কি জানো ভাইয়াকে বিয়ে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু ভাইয়া কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি..!

যখনি বিয়ের কথা বলা হয় তখন জুলি আপুর ছবি বের করে কি কি যেনো করে আর মনে হয় ছবির সাথে অনেক কথা বলছে..

হঠাৎ করে রাত্রী ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল..

রাত্রীঃ- আরে আরে আপু তুমি এমন ভাবে কাঁদছো কেনো?

রাত্রীর কাছ থেকে সব কিছু শুনে ইশা কান্না করে দিয়েছে…

চলবে……………………

★[জানিনা কতটা ভালো লিখতে পারছি। তবুও কেমন হয়েছে তা জানালে খুশি হব। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।ধন্যবাদ]★

 

About Numan Ahmed

Check Also

অশরীরীর অভিশাপ

রাত তখন প্রায় বারোটা। গ্রামটি নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর মাঝে মাঝে বাতাসের ফিসফিসানি। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *